ফ্যাসিস্ট সরকারের অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় জেল খেটেছি: রফিকুল আমীন
পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় রোষানলের শিকার হয়ে দীর্ঘদিন কারাবরণ করতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ডেসটিনি গ্রুপের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টির আহ্বায়ক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আমীন। তিনি বলেন, সততার সঙ্গে ডেসটিনি গ্রুপ পরিচালনা করছিলাম। যার বড় প্রমাণ গ্রুপটির ছয় থেকে সাত হাজার কোটি টাকার সম্পদ থাকলেও দায় মাত্র ৩ হাজার কোটি টাকার। বুধবার (১৪ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘মিট দ্যা রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।রফিকুল আমীন বলেন, আমি এখনও ডেসটিনির ম্যানেজমেন্টে প্রবেশ করতে পারিনি। ডেসটিনি ছাড়া আমি কোনো নতুন কোম্পানিও শুরু করিনি। আমি একটি ই-কমার্স কোম্পানি শুরু করেছিলাম সেটিও এখন বন্ধ। ডেসটিনির কোনো ঋণের দায় নেই। গ্রুপটির ছয় থেকে সাত হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে, তবে দায় মাত্র ৩ হাজার কোটি টাকার। দায়িত্ব পেলে এবং বন্ধ ব্যাংক হিসাবগুলো সচল করে দিলে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দেয়া শুরু করবো।তিনি বলেন, যখন ডেসটিনির কার্যক্রম শুরু করি তখন ফ্যাসিস্ট সরকারের রোষানলে পড়ি। আমি সততার সর্বোচ্চ পন্থা নিয়ে ডেসটিনি শুরু করি। আমার প্রতি রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দেয়। তারা যে মামলা করেছে সেখানে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল না। তবে আমি নিয়ম মেনে একটা সমবায় সমিতি করি। সেখানে একটি আমার ভুল ছিল আমি অনুমোদন না নিয়ে ৫ লাখ টাকার বেশি কেন বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছিলাম। সমবায় আইনে মামলা করার কথা থাকলেও আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হলো মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে। আমাকে হয়রানি করতে দুদকের কয়েকজন কর্মকর্তার উৎসাহে ওই মামলা দেয়া হয়।রফিকুল আমীন বলেন, মুদ্রা পাচার আইন নাম থাকলেও আমাকে সেই আইনে মামলা না দেখিয়ে ২০১২ সালের আইনে ফেলে দীর্ঘ কারাবাসের ব্যবস্থা করা হয়। আমাকে ২০০৯, ২০১২ সালের আইনে জড়িয়েছে আমাকে যা ছিল অন্যায়। এমনকি তারিখ পরিবর্তন করে দিয়েছিল। আমার বিরুদ্ধে অনেক বড় ষড়যন্ত্র করা করা হয়। ২০১২ সালে যখন একটি মামলার রায় হয় তখন জজ সাহেব বুঝতে পারলেন মামলাটা দুদক সাজিয়ে করেছে। তখন ওই সব কর্মকর্তাদের ডাকা হয় আদালতে তারা তখন কয়েকটি পত্রিকার রিপোর্ট উপস্থাপন করে আমাকে অপরাধী প্রমাণের চেষ্টা করে। এতে আদালত প্রকাশ্যে দুদক কর্মকর্তাদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন।তিনি বলেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) একটা টর্চার সেলে পরিণত হয়েছিল। সেখানে আমাদেররকে মিথ্য জবানবন্দি নেয়ার জন্যে চোখে কাপড় বেঁধে এবং মুখে গরম পানি ঢেলে অমানবিক নির্যাতন করা হতো। আমাকে ১৬৪ ধারায় সাক্ষী দিতে বলেছিলেন। আমি দেইনি বলে আমার সাথে গ্রেপ্তার হওয়া ডেসটিনি ২০০০-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনকে রিমান্ডে সীমাহীন টর্চার করে। দুদক আসলে একটা টর্চার সেলে পরিণত হয়েছিল বিগত সরকারের আমলে।তিনি আরো বলেন, দুদক তো দুর্নীতি দমন করে। তারা কেন টর্চার করবে?রফিকুল আমীন বলেন, আমি ২৩ দিন ছিলাম দুদকে। আমাদের মারধর করে সাইকোলোজিক্যালি ডাউন করা হয়। আমাদের লোকদের বলা হতো সাক্ষী হবা, নাকি আসামি হবা। তারা বলতেন, আমরা অন্যায় করিনি। দুদকের ষড়যন্ত্রকারীরা কোন মামলায় ডেসটিনির ৪৫ বিনিয়োগকারীদের সাক্ষী রাখেনি। সাক্ষী হয়েছে সরকারি কর্মকর্তা, বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এভাবে ২১৯ জন সাক্ষী বানায়। আমাকে রিমান্ডে নিয়ে দুদক থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, বিদেশে চলে যান। আমি বলেছি আমি যাব না। তারা আবার অফার করে ডেসটিনি সব বন্ধ করে দেন এক সপ্তাহের মধ্যে জামিন দেব। আমি বললাম বিনিয়োগকারিরা বেকার হয়ে যাবে।তিনি বলেন, আমাকে হুমকি দেয়া হয়েছে, আপনি যদি আমাদের কথা না শুনেন (অনৈতিক প্রস্তাব) আপনার বউ বাচ্চা ধরে নিয়ে আসবো। আমি তাতে রাজি না হওয়ায় আমার বউকে আসামি করা হয়েছে। আমার বউ এখনো জেলে আছে। বিনা অপরাধে কত মানুষ জেল খাটছে। হাসিনার অত্যাচারে যারা বিনাদোষে জেলে গেছেন তারা এখনো বের হতে পারেনি। জেলে থাকতে আমি সবাইকে কথা দিয়ে এসেছি আমি রাজনৈতিক মঞ্চ তৈরি করব সেখানে আপনাদের নির্যাতনের কথা বলব। এসব অবিচার জুলুমের প্রতিবাদ করতেই পূর্বের পরিকল্পনা অনুয়ায়ী আজ রাজনীতিতে নেমেছি। আজকের আমজনগণ পার্টি তারই অংশ। আমি মানুষের পাশে দাড়াতে রাজনৈতিক দল গঠন করেছি।পার্টির নাম পরিবর্তন সম্পর্কে রফিকুল আমীন বলেন, আমজনতা নাম ছিল শুরুতে এটি ২০২২ সালে আমি চিন্তা করেছিলাম। ৫ আগস্টের পর আমজনতা দল নামে একটি দল এলো এরপর আমজনতা দলের নেতা তারেক রহমানের অনুরোধ করেন দলের নাম পরিবর্তনের জন্যে। আমি প্রতিহিংসা না করে তাদের সম্মানে আমজনগণ পার্টি নামকরণ করেছি।ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির আয়োজনে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেলের সঞ্চালনায় মিট দ্যা প্রেসে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সালেহ আকন।ভোরের আকাশ/এসএইচ