আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে থেকেই আন্দোলনের শহরে রূপ নেয় ঢাকা। গত বছরের জুলাই শুরু হওয়া কোটাবিরোধী আন্দোলনের রেশ কিছুতেই কাটছে না। ৫২ গলি আর ৫৩ রাস্তার শহরটিতে যে যেভাবে পারছে, আন্দোলন করছে। কিন্তু এতে যে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে, সেটা কারো মাথায় নেই।সরকার বিষয়টি ভালোভাবে হ্যান্ডেল করতে পারছে না। ফলে আজ এ দল তো, কাল ও দল, গোষ্ঠী আন্দোলন করে তাদের শক্তি জানান দিচ্ছে। মাঝখানে বলির পাঠা হচ্ছে জনগণ। এখন আবহাওয়ার মতো কোন রাস্তায় কে কখন আন্দোলন করছে, সেটা জেনে রাস্তায় বের হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন অনেকে। এই পরামর্শকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ এই আন্দোলনের কারণে ৩০ মিনিটের রাস্তা যেতে কারো কারো চার ঘণ্টাও লাগছে। বৃহস্পতিবার (২২ মে) একটি জাতীয় দৈনিক অনলাইন ভার্সনে ‘আজ ঢাকায় কোথায় কী’ শিরোনামে একটি ফটোকার্ড প্রকাশ করেছে। এতে লেখা হয়েছে- সকাল ১০টা থেকে নগর ভবন (ডিএসসিসি), হাইকোর্ট এলাকা, মৎস্য ভবন ও কাকরাইলে ইশরাক সমর্থকদের সড়ক অবরোধ। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত শাহবাগ মোড় ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে সাম্য হত্যা মামলার তদন্তে গাফিলতির প্রতিবাদে ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচি। বিকেল ৪.৩০ যাত্রাবাড়ি চৌরাস্তায় নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির বিক্ষোভ মিছিল।’প্রিয় পাঠক, হয়তো বলবেন- আন্দোলন করা তো গণতান্ত্রিক অধিকার। হ্যাঁ, অবশ্যই গণতান্ত্রিক অধিকার। আমিও এই অধিকারের পক্ষে। কিন্তু একজন তার অধিকার আদায় করতে গিয়ে আরও হাজারো মানুষকে দুর্ভোগে ফেলবেন- এটা কেমন গো? আপনি কারো যাতায়াতে বাধা সৃষ্টি করলেন মানে তার সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করলেন। আপনি যদি এই তীব্র যানজটে কখনো আটকে পড়েন, তাহলে দুর্ভোগের মাত্রা বুঝতে পারবেন।গত ৯ মাসে ঢাকা শহরে পাঁচ শতাধিক আন্দোলন হয়েছে। এই মুহূর্তে পাঁচটির বেশি পক্ষ রাজপথে আছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) হিসাবে, ঢাকায় গড়ে প্রতিদিন কমপক্ষে তিনটি আন্দোলন কর্মসূচি পালিত হয়। সে হিসেবে অন্তবর্তীকালীন সরকারের সময়ে পাঁচ শতাধিক আন্দোলন হয়েছে ঢাকার বুকে। কিছু কিছু আন্দোলন হাস্যরও সৃষ্টি করেছে। যেমন এর আগে কিছু শিক্ষার্থী অটোপাসের দাবিতে আন্দোলন করে।গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অটোরিকশার চালু; আনসারদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো; চাকরিচ্যুত সেনা ও পুলিশ সদস্যদের পুনর্বহাল; বিডিআর বিদ্রোহে কারাবন্দি সদস্যদের মুক্তি, ক্ষতিপূরণ ও চাকরিতে পুনর্বহাল; নিয়োগ বঞ্চিত বিসিএস ক্যাডারদের নিয়োগ; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত সাত কলেজ পৃথকীকরণ এবং স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় গঠন; এবতেদায়ী শিক্ষকদের জাতীয়করণ; সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়োগসহ বিভিন্ন দাবিতে রাজপথে মিছিল, সমাবেশ ও বিক্ষোভ হয়েছে।পলিটেকনিক্যালের শিক্ষার্থীদের অবরোধ, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বৃদ্ধির আন্দোলন, রেলের কর্মচারীদের আন্দোলনও হয়েছে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন, ওয়াসা, ডেসা, সচিবালয় কর্মচারি থেকে বিভিন্ন সরকারি, আধা সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান মাঠে নামে।আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে এনসিপির আন্দোলন শেষ না হতেই ডিপ্লোমা ইন নার্সিং এবং ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্সকে স্নাতক সমমানের স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে মাঠে শিক্ষার্থীরা। ৭০ শতাংশ আবাসন ভাতাসহ তিন দফা দাবিতে রাজধানীর কাকরাইল মোড় অবরোধ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা।ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে ‘মার্চ টু গাজা’ কর্মসূচিতেও মানুষের ঢল নামে। ১৮ মে চাকরিচ্যুত সেনাসদস্যরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। একই দিনে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে ইশরাক হোসেনের শপথের ব্যবস্থা করাতে চতুর্থ দিনের মতো বিক্ষোভ করেন তার অনুসারীরা।বৃহস্পতিবারও ইশরাক সমর্থকরা কাকরাইল ও মৎস্য ভবন এলাকায় বিক্ষোভ করেন। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যলালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে শাহবাগ থানা ঘেরাও, শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এখন প্রশ্ন হলো- আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরে এতো আন্দোলন হয়নি। তখন সরকারের পেটুয়া বাহিনী পুলিশ সব আন্দোলন কঠোর হাতে দমন করেছে। সেই আওয়ামী লীগ সরকারের পতন যেহেতু আন্দোলনে হয়েছে, সেহুতু এখনই দাবি আদায়ের মোক্ষম সময় মনে করছে বিভিন্ন গোষ্ঠী। কিন্তু এখন আন্দোলন মানেই মিছিল, সমাবেশ, অবরোধ।বিশেষ করে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ কোনো সড়কে বা মোড় অবরোধ করা হলে তার ফলে ওই এলাকায় যে তীব্র যানজট তৈরি হয়। আশপাশের সকল সড়কে, অলি-গলিতে এবং ধীরে ধীরে সেই ভোগান্তি ছড়িয়ে পড়ে পুরো শহরে। কেননা, সবাই তখন বিকল্প পথে গন্তব্যে পৌঁছাতে চায়। এখন আন্দোলনের মোক্ষম জায়গা হলো শাহবাগ মোড়।দেশের একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বারডেম হাসপাতাল সেখানে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই দুটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান। অসংখ্য রোগীর আত্মীয়-স্বজনরা যান। ফলে শাহবাগ মোড়ে যখন অবরোধ হয়, তার প্রধান ভিকটিম হন এই মানুষগুলো। অনেক সময় চিকিৎসক ও হাসপাতালের অন্যান্য কর্মীরাও সঠিক সময়ে হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না। তাতে রোগীদের সেবা ব্যাহত হয়।যারা আন্দোলন করছেন, তাদের বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত। সরকারের উচিত শাহবাগ কিংবা গুরুত্বপূর্ণ সড়কে আন্দোলন নিষিদ্ধ করা। এক্ষত্রে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সভা-সমাবেশ করতে পারে আন্দোলনরতরা। এতে কিছুটা হলেও মানুষের দুর্ভোগ কমবে।লেখক: সাংবাদিক।ভোরের আকাশ/এসএইচ
১ মাস আগে
এক সুপার পাওয়ারের নাম চীন। অর্থনীতি থেকে সামরিক শক্তি- অবিশ্বাস্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশটি। প্রতিবেশী আরেক সুপার পাওয়ার রাশিয়া তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। শত্রু কেবল যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশটি কেবল যুক্তরাষ্ট্রকেই প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে। খোদ যুক্তরাষ্ট্রেও তাদের পাওয়ার যথেষ্ট। এ কারণে যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ঠিক তার বিপরীত অবস্থানে থাকে চীন। সম্প্রতি বন্ধ হয়ে যাওয়া ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধেও দেশটির অনানুষ্ঠানিক অংশগ্রহণ ছিল। প্রকাশ্যে বন্ধু পাকিস্তানের পক্ষে থাকার ঘোষণা দেয় বেইজিং। অন্যদিকে ভারতের পাশে থাকার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে শেষ পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে যায়। এর পর থেকে উভয় দেশ অর্থাৎ ভারত ও পাকিস্তান নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করেছে। দেশ দুটি বিজয়ও উদযাপন করেছে। বিষয়টি অনেকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো। অথবা পাগলের সুখ মনে মনে, কাগজ কুড়ায় আর টাকা ভাবে। তবে এই যুদ্ধে জিতে গেছে চীন। এখন প্রশ্ন হলো- যুদ্ধ করলো ভারত-পাকিস্তান, চীন জিতলো কীভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে একটু পেছনে যেতে হবে। চীনের প্রতিরক্ষা শিল্প এই যুদ্ধ থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে বিজয়ী হয়েছে। এই যুদ্ধ শুরু হয় ৭ মে।ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন এবং এ ঘটনার জেরে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে তথাকথিত ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’ লক্ষ্য করে হামলা চালায় ভারত। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে ভারতের চালানো এ হামলার পরপরই উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি সামরিক অভিযান শুরু করে। এসব অভিযানে ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধবিমান ব্যবহৃত হয়। পাকিস্তান তার পাল্টা অভিযানের নাম দেয় ‘অপারেশন বুনইয়ান-উন-মারসুস’। সংঘর্ষে ভারত ফরাসি ও রুশনির্মিত যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে।অন্যদিকে, পাকিস্তান ব্যবহার করে চীনের সঙ্গে তাদের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত জে-১০ ও জে-১৭ যুদ্ধবিমান। ইসলামাবাদের দাবি- তাদের যুদ্ধবিমান অন্তত ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। এগুলোর মধ্যে নতুন করে কেনা ফরাসি রাফালও রয়েছে। দিল্লি এ দাবির কোনো জবাব দেয়নি। ‘ক্ষতি যুদ্ধের অংশ’- ভারতীয় বিমানবাহিনীর (আইএএফ) এয়ার মার্শাল এ কে ভারতি ওই দাবি প্রসঙ্গে গত সপ্তাহে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। তবে পাকিস্তান ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করেছে, নির্দিষ্ট এ দাবি নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।তাদের বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, পাকিস্তান সম্ভবত চীনা-নির্মিত জে-১০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ভারতীয় যুদ্ধবিমানের বিরুদ্ধে আকাশ থেকে আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এ সক্রিয় যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ব্যাপকভাবে চীনা অস্ত্র ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে পাকিস্তানের বিজয় দাবি করাকে কিছু বিশেষজ্ঞ বেইজিংয়ের প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য বড় অর্জন হিসেবে দেখছেন। যদিও অনেকে এ দাবির সঙ্গে একমত নন। কিছু বিশেষজ্ঞ এটিকে চীনের অস্ত্রশিল্পের জন্য একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত’ বলে অভিহিত করেন। এ বক্তব্যের মাধ্যমে চলতি বছরের জানুয়ারিতে একটি চীনা এআই স্টার্টআপ তাদের সাশ্রয়ী প্রযুক্তি দিয়ে মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টদের চমকে দেওয়ার ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে। ‘এ আকাশযুদ্ধ ছিল চীনা অস্ত্রশিল্পের জন্য এক বিশাল বিজ্ঞাপন। এখন পর্যন্ত যুদ্ধ পরিস্থিতিতে নিজের প্ল্যাটফর্মগুলোর কার্যকারিতা পরীক্ষার কোনো সুযোগ চীনের হয়নি বলে মনে করেন চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র কর্নেল ঝৌ বো। তার ভাষ্য, এ আকাশযুদ্ধের ফলাফল এটিই দেখিয়েছে, ‘চীনের এমন কিছু ব্যবস্থা রয়েছে, যেগুলো তুলনাহীন।’ ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে জে-১০ যুদ্ধবিমানের কার্যকারিতা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর গত সপ্তাহে এ বিমান নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান অ্যাভিক চেংদু এয়ারক্রাফট নামের প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়ে যায়। তবে অন্য কয়েকজন বিশেষজ্ঞ মনে করেন, চীনা অস্ত্র ব্যবস্থার শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করার সময় এখনো আসেনি।লন্ডনের কিংস কলেজের অধ্যাপক ওয়াল্টার ল্যাডউইগ বলেন, চীনা যুদ্ধবিমানগুলো প্রকৃতপক্ষে ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিমানগুলো, বিশেষ করে রাফালকে কৌশলে হার মানিয়েছে কি না, তা এখনো নির্ধারণ করা যায়নি। ‘সামরিক কৌশলের সাধারণ নীতি হলো, স্থলভাগের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগে শত্রুর বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আক্রমণ করে আকাশে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে, ভারতীয় বিমানবাহিনীর অভিযানের লক্ষ্য স্পষ্টতই পাকিস্তানকে কোনো সামরিক জবাব দিতে উসকানি দেওয়া ছিল না। তার মতে, পাকিস্তানের পুরো বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা যখন সর্বোচ্চ সতর্কতাবস্থায় ছিল এবং তাদের যুদ্ধবিমান আকাশে ছিল, তখন ভারতীয় পাইলটদের অভিযানে যাওয়ার নির্দেশে দেওয়া হয়। ভারতীয় বিমানবাহিনী তাদের মিশনের বিস্তারিত বা কৌশলগত তথ্য প্রকাশ করেনি।জে-১০ যুদ্ধবিমান রাফালসহ ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, এমন প্রতিবেদনগুলোর বিষয়ে বেইজিং এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। তবে জে-১০ একটি পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, এ অনিশ্চিত খবরাখবর চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজয়োল্লাস তৈরি করেছে।ইতালির ভেরোনাভিত্তিক আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা গবেষণা দল ‘স্টাডি অব সিকিউরিটি’র চীনবিষয়ক গবেষক কার্লোত্তা রিনাউডো বলেন, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য থেকে নিশ্চিত সিদ্ধান্তে (জে-১০ দিয়ে পশ্চিমা অস্ত্রব্যবস্থা ধ্বংস করা) পৌঁছানো কঠিন হলেও চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জাতীয়তাবাদী বার্তায় ভরে গেছে।এ মুহূর্তে বাস্তবতার চেয়ে ধারণাই বেশি প্রভাব বিস্তারকারী হয়ে উঠেছে। এ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে প্রকৃত বিজয়ী আসলে চীনই। পাকিস্তান চীনের একটি কৌশলগত ও অর্থনৈতিক মিত্র। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের অংশ হিসেবে চীন পাকিস্তানে অবকাঠামো নির্মাণে পাঁচ হাজার কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করছে। অতএব, দুর্বল পাকিস্তান চীনের স্বার্থ নয়।ভারত-পাকিস্তান এই সাম্প্রতিক সংঘাতে চীন গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য গড়ে দিয়েছে বলে মনে করেন পাকিস্তানি নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইমতিয়াজ গুল। তিনি বলেন, ‘ভারতীয় পরিকল্পনাকারীদের জন্য এটা ছিল একেবারেই অপ্রত্যাশিত। তারা সম্ভবত পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে এতটা গভীর সহযোগিতার বিষয়টি কল্পনাও করেননি।’বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি বাস্তব যুদ্ধ পরিস্থিতিতে চীনা যুদ্ধবিমানগুলোর নৈপুণ্য পশ্চিমা দেশগুলোতে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এর প্রভাব বিশ্ব অস্ত্রবাণিজ্যে পর্যায়ক্রমিকভাবে ছড়িয়ে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ, আর চীন রয়েছে চতুর্থ স্থানে। চীন সাধারণত মিয়ানমার ও পাকিস্তানের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে অস্ত্র বিক্রি করে। এর আগে চীনা অস্ত্রব্যবস্থাকে নিম্নমান ও কারিগরি সমস্যার জন্য সমালোচিত হতে হয়েছে।২০২২ সালে চীন ও পাকিস্তানের যৌথ নির্মিত জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমানগুলোর বেশ কয়েকটি কারিগরি ত্রুটির কারণে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ব্যবহার বন্ধ করে দেয়। নাইজেরিয়ার সামরিক বাহিনীও চীনের তৈরি এফ-৭ যুদ্ধবিমান নিয়ে একাধিক কারিগরি সমস্যার অভিযোগ করেছে। তবে, বেইজিং হয়তো সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের বিস্তারিত নিয়ে মন্তব্য না করতে পারে; কিন্তু তারা এটা দেখাতে আগ্রহী যে তাদের অস্ত্রব্যবস্থা দ্রুত পশ্চিমা দেশের সমকক্ষ হয়ে উঠছে।চীন পাকিস্তানকে যে যুদ্ধবিমান দিয়েছে, সেগুলো তুলনামূলকভাবে আগের মডেলের। বেইজিং ইতিমধ্যে আরও উন্নত জে-২০ স্টিলথ যুদ্ধবিমান নিজেদের বাহিনীতে যুক্ত করেছে; যা রাডার এড়াতে সক্ষম। লেখক: সাংবাদিক।
১ মাস আগে
কয়েক দিন ধরে রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছে ‘করিডর’ ইস্যু। বিভিন্ন দল বিশেষ করে বিএনপি এই করিডরের তুমুল বিরোধিতা করে আসছে। কডিরের কারণে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে- এমন আশঙ্কাও করেছেন অনেকে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ‘মানবিক করিডর’ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার- ২৭ এপ্রিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন তার দপ্তরে সাংবাদিকদের এই কথা জানানোর পর থেকেই চলছে তুমুল আলোচনা। চায়ের দোকান থেকে রাজনীতির মঞ্চ- সব জায়গাতেই একই বিষয় ‘করিডর’।এখন প্রশ্ন হলো মিয়ানমারকে কেন করিডর দিতে হবে? নেইপিদো কী করিডর চেয়েছে? না, চায়নি। যে রাখাইন রাজ্যে করিডর দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, সেই রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি সেখানকার নিয়ন্ত্রক। তারা কী করিডর চেয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তরও ‘না’। তাহলে করিডর চাইল কে? সেই প্রশ্নের উত্তর মিলেছে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার কথায়। তার ভাষ্য, ‘এতটুকু আপনাদের বলতে পারি, নীতিগতভাবে আমরা এতে সম্মত। কারণ, এটি একটি হিউম্যানিটেরিয়ান প্যাসেজ (মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ) হবে।কিন্তু আমাদের কিছু শর্তাবলি রয়েছে, সেই বিস্তারিততে যাচ্ছি না। সেই শর্তাবলি যদি পালিত হয়, আমরা অবশ্যই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’ অর্থাৎ করিডর চেয়েছে জাতিসংঘ। বিষয়টি নতুন না। এ বছরের প্রথমার্ধে রাখাইন রাজ্যে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করেছিল জাতিসংঘ। এ জন্য মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে বাংলাদেশের কাছে ‘করিডর’ দেওয়ার অনুরোধ করেছিল সংস্থাটি। সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শর্ত সাপেক্ষে মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের জন্য করিডর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা। বাংলাদেশের এই সিদ্ধান্তকে সাদা চোখে দেখলে বেশ ভালই মনে হবে। কিন্তু একটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলেই অন্যচিত্র বের হয়ে আসবে।প্রথমত, মিয়ানমার বাহিনীর সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ চলছে বিদ্রোহীদের। এই রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ এখন বিদ্রোহীদের হাতে (আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের তথ্য)। বিদ্রোহীদের কোণঠাসা করতে সরকার সব সরবরাহের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে সেখানে দুর্ভিক্ষের অবস্থা বিরাজ করছে। এখন যদি বাংলাদেশ করিডর দেয়; তাহলে সেটা হবে বিদ্রোহীদের সহায়তা; যা দুই দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আবার যে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে; সেই সহায়তা রোহিঙ্গাদের হাতে পৌঁছবে কি না, তার নিশ্চয়তা নেই। ধরেই নিতে হবে- এই ত্রাণ সামগ্রী রোহিঙ্গারা পাবেন না।কেননা, রোহিঙ্গাদের অনেকে সরকারি বাহিনীর হয়ে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের নির্যাতন করছে। তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে- এমন খবরও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। সুতরাং এই ত্রাণ সহায়তা যে রোহিঙ্গারা পাবেন না, তা নিশ্চিত। করিডর চালুর আগেই সোয়া লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে।করিডর চালু হলে সেখানে থাকা বাকি আরও লাখ দশেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসতে পারে। কারণ তাদের অনেক আত্মীয়-স্বজন এদেশে ক্যাম্পে রয়েছে। তারা তাদের আনার চেষ্টাও করছে। মাঝেমধ্যেই সীমান্তের ওপারে জড়ো হন রোহিঙ্গারা। দালালের মাধ্যমে তারা এ দেশে আসেন। কোনওভাবেই তাদের ঠেকানো যাচ্ছে না। এ অবস্থায় করিডর চালু হলে রোহিঙ্গার ঢল নামবে। করিডরকে আসা-যাওয়ার পথ বলা হলেও তা মূলত আসার পথ হবে; যাওয়ার পথ নয়।করিডর দিয়ে আরাকান আর্মি রোঙ্গিাদের এ দেশে ঠেলে দিতে পারে। আরাকান আর্মি জান্তা বাহিনীর শত্রু হলেও একটা জায়গায় তাদের মিল আছে। উভয় বাহিনীই রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুত করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিতে চায়। কারণ রোহিঙ্গাদের সিংহভাগ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। আর জান্তা ও আরাকান আর্মি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তারা মুসলমানদের সহ্য করতে পারে না। এই করিডর দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে আরাকান আর্মি প্রবেশ করলে ঠেকানোর উপায় আছে?তারা যদি বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং অপরাধ করে ফিরে যায়, তাহলে আমাদের করার কী আছে? কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অনেকে রাখাইনে গিয়ে যুদ্ধ করে অস্ত্র নিয়ে ফিরে আসছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন তো বিজিবির পাহারা আছে। তারা বাধা দিচ্ছে। তারপরও অপরাধী রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। করিডর চালু হলে রোহিঙ্গারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। এই জনগোষ্ঠীর একটা বিশাল অংশ কক্সবাজারে মাদকদ্রব্য পাচার, ডাকাতি, চুরি, ছিনতাই করছে। তাদের বিরুদ্ধে এদেশের মানুষকে অপরহরণেরও প্রমাণ মিলেছে।নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের খুব কম মানবিক করিডরই নিরাপত্তাঝুঁকির বাইরে থেকেছে। যদিও মানবিক করিডর দেওয়া হয় সাধারণ নাগরিকদের সহায়তার জন্য। তবে এ ধরনের করিডর চালু হলে সেই অঞ্চলে থাকা বিদ্রোহী বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীসহ অপরাধীরা সেটাকে নিরাপদ পথ হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে থাকে। এ অঞ্চল বিশ্বে মাদকদ্রব্য, অবৈধ অস্ত্র পাচারসহ নানা আন্তঃসীমান্ত অপরাধের অন্যতম রুট হিসেবে পরিচিত। করিডর দিলে মাদক বা অবৈধ অস্ত্র বাংলাদেশে প্রবেশের আশঙ্কা থাকবে। এ ছাড়া মিয়ানমারের রাখাইনে বর্তমানে কোনো স্বীকৃত প্রশাসন নেই। ফলে সেখানকার অস্বীকৃতদের সঙ্গে কোনো ধরনের দর-কষাকষির আলাদা ঝুঁকি রয়েছে। সেই সঙ্গে অন্যান্য নিরাপত্তাঝুঁকি তো রয়েছেই।বিকল্প হতে পারে সিতওয়ে: রাখাইন রাজ্যের রাজধানী হলো সিতওয়ে। কালাদান, মায়ু ও লে ম্রো নদীর মোহনায় বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থিত এটি। ২০২৩ সালের ১২ মে সেখানে নতুন পোর্ট টার্মিনাল উদ্বোধন করা হয়। ভারতের সহায়তায় এটি নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে বড় জাহাজ ভিড়তে পারে। মানবিক করিডর অর্থাৎ ত্রাণ সামগ্রী পাঠাতে কিংবা বেসামরিক নাগরিকদের সেখান থেকে সরিয়ে নিতে এই বন্দর ব্যবহার করতে পারে জাতিসংঘ। ভারত ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্ত রয়েছে। এসব সীমান্তকে করিডর হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি দিতে জাতিসংঘ অনুরোধ করতে পারে। বাংলাদেশের মতো একটা ছোট দেশের কাছে জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর এতো আবদার কেন? এমনিতেই ১৩ লাখ রোহিঙ্গার চাপে বাংলাদেশ ন্যূজ¦। তাদের অনুরোধেই মিয়ানমারের বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। তারা এখন আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বহু চেষ্টা তদবির করেও তাদের ফেরত পাঠানো যাচ্ছে না।অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস থাইল্যান্ড সফরে গিয়ে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ফেরত নেবে বলে আশ্বাস পাওয়ার কথা জানালেন। কিন্তু বাস্তবে আমরা কী দেখলাম? মিয়ানমার একজন রোহিঙ্গাকেও নেয়নি। বরং কয়েক দিন আগে সোয়া লাখের বেশি রোহিঙ্গা এদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। এ তো গেল তালিকার কথা। তালিকার বাইরে কতজন এসেছে; সেই হিসাব কারো কাছে আছে? বাংলাদেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর খেলা বন্ধ করা উচিত। আমাদেরও সতর্ক থাকতে হবে। তারা যেন কিছু আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে না পারে। আমরা যেন তাদের খেলার ঘুঁটি না হই। করিডর ইস্যুতে রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের সঙ্গে জড়িত এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয় (করিডর) সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিন্তু জনগণকে জানায়নি। এমনকি জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও কোনো আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করেনি। দেশের জনগণকে না জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে কি না কিংবা নেওয়া উচিত কি না, এই মুহূর্তে সে বিতর্ক আমি তুলতে চাই না। তবে দেশের স্বাধীনতা প্রিয় জনগণ মনে করে, করিডর দেওয়া না দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে হবে জনগণের কাছ থেকে, সিদ্ধান্ত আসতে হবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জাতীয় সংসদের মাধ্যমে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক বিশ্বের দেশে দেশে এটাই নিয়ম, এটাই রীতি।বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার যে ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে (করিডর ইস্যু) তাতে দেশের ‘স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির’ মুখে পড়বে। এক্ষেত্রে সরকার এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটি ঠিক হয়নি। উচিৎ ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া।এছাড়া জামায়াতে ইসলামী, গণঅধিকার পরিষদসহ প্রায় সব দলের নেতারা করিডর ইস্যুতে বিরোধিতা করছেন। এ কারণে সরকারের উচিত এখান থেকে সরে আসা। সরকারকে মনে রাখতে হবে করিডর দিয়ে যেন আমরা নতুন বিপদ ডেকে না আনি; যেমনটা আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে করেছি। লেখক: সাংবাদিক।ভোরের আকাশ/এসএইচ
১ মাস আগে
আওয়ামী লীগ সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনকালে রাজনীতির গতিপথ পাল্টে গিয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারকে অব্যাহতভাবে সমর্থন করে আসছিল কিছু ছোট দল। তারা নানাভাবে সরকারের কাছ থেকে লাভবান হচ্ছিল। অন্যদিকে বিরোধীদল বলতে কিছু ছিল না। বিএনপি ২০০৯ সালের পর থেকে বিরোধী দলের আসনে থেকে সরকারের ভুল-ত্রুটি নিয়ে সমালোচনা-আন্দোলন করে আসছিল। কিন্তু তাদের কঠোর হাতে দমন করে সরকার। যুক্তিতর্কের পাশাপাশি দলীয় পেটুয়া বাহিনী আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তাদের দমন করে আসছিল। মামলার ভারে ন্যুব্জ ছিল দলটির নেতাকর্মীরা। একইভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছিল জামায়াতে ইসলামী। ফলে অন্য দলগুলো কেবল বিবৃতি দিয়েই দায় সারছিল। তাদের তেমন রাজপথে দেখা যায়নি। পরের সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসেছিল জাতীয় পার্টি। দলটিকে অনেকে গৃহপালিত বিরোধী দল বলতো। মূলত তারা সরকারেরই অংশ। কেবল নিয়ম রক্ষার জন্য তারা বিরোধী দলে বসেছিল। এসব কারণে অনেকটা বিরোধীদল বিহীনভাবেই আওয়ামী লীগ সরকার দেশ শাসন করে আসছিল। এক কথায় রাজনীতি ছিল কেবল আওয়ামী ধারার।গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়। এ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর থেকে রাজনীতিতে নানা পরিবর্তন আসতে থাকে। আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাহী আদেশে জামায়াতে ইসলামী এবং এর ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। সেই নির্বাহী আদেশ সরকার তুলে নেয়। ফলে প্রকাশ্য রাজনীতি করার সুযোগ পায় জামায়াত-শিবির। সন্ত্রাসী তালিকায় থাকা হিযবুত তাহরীরও প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু এই সময়ে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি ঝিমিয়ে পড়ে। তাদের কার্যক্রম চোখে পড়ে না। মাঝেমধ্যে ঝটিকা মিছিল করে আওয়ামী লীগ। কিন্তু জাতীয় পার্টি একেবারে চুপ হয়ে যায়। এখনও তাদের কার্যক্রম নেই। কিছুদিন আগে ছাত্রলীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকার। সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের দেশত্যাগের পর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের জোরালো দাবি উঠে। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে পরে শাহবাগ অবরোধ করে জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বে দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। পরে জামায়াত-শিবিরসহ আরও কিছু দল এতে অংশ নেয়। একপর্যায়ে সরকার আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কার্যক্রম বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করে। এ নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। দলটি কার্যত নিষিদ্ধ হওয়ায় কার লাভ হলো কিংবা কার লোকসান হলো- এই হিসাবনিকাশও চলছে। রাজনীতির মোড় কোন দিকে ঘুরছে বা কী ধরনের মেরুকরণ হচ্ছে, সেই প্রশ্নও উঠছে?লাভ-লোকসানের হিসাবনিকাশের আলোচনায় দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে সক্রিয় দলগুলোর মধ্যে লাভের খাতায় নাম আসছে বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনে নিয়ন্ত্রণ ছিল এনসিপি এবং জামায়াতসহ ইসলামপন্থী বিভিন্ন দল ও সংগঠনের হাতে। অন্যতম প্রধান দল বিএনপি সেই আন্দোলনে অংশ নেয়নি। যদিও আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার যখন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে, এরপর সেই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতি দিয়ে বলেছেন ‘তারা আনন্দিত’।আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে বিভিন্ন সময় বিএনপি নেতাদের বক্তব্য ছিল, তারা কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নন। ফলে শেষ পর্যন্ত দলটির দোটানা অবস্থান ছিল বলে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন। তবে রাজনীতির সমীকরণ, লাভ-ক্ষতির আলোচনা যাই হোক না কেন- এমন পটভূমিতে নির্বাচন কবে হবে, সেই প্রশ্নে সন্দেহ বেড়েছে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলে। এমনকি এই দলগুলোর নেতাদের অনেকে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার কথাও বলছেন। রাজনীতিকদের কেউ কেউ বলছেন, বিরাজনীতিকরণের কোনো চেষ্টা হচ্ছে কি না, তাদের মধ্যে এখন এই প্রশ্নেও আলোচনা হচ্ছে।নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় আওয়ামী লীগ যেহেতু নির্বাচন করতে পারবে না, সে প্রেক্ষাপটে বিএনপির রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী একজন কমলো। সেটিই বিএনপির জন্য লাভের বিষয় বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় এনসিপি এবং জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ও হেফাজতে ইসলামসহ ইসলামপন্থীদের লাভের অঙ্ক ভারী হয়েছে। কারণ এসব দল ও সংগঠন গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার শাসনের পতনের পর থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করে আসছিল। এখন তাদের আন্দোলনের মুখে দাবি পূরণ হলো। এছাড়া রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরবর্তী পরিস্থিতিতে এসব দলের প্রভাব নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গন এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা আলোচনা ছিল। এখন আওয়ামী লীগ কার্যত নিষিদ্ধ হওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার ও পরিস্থিতির ওপর এনসিপি এবং জামায়াতসহ ইসলামপন্থী দল ও সংগঠনের প্রভাবের বিষয়টা আবার সামনে এসেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তবে এসব দল ও সংগঠনের লাভের খতিয়ানেও তারতম্য আছে বলে বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন। তাদের মতে, এই আন্দোলন শুরু করেছিল এনসিপি। কিন্তু জামায়াতসহ ইসলামপন্থীদের হাতে এর নিয়ন্ত্রণ চলে গিয়েছিল। এর প্রমাণ হিসেবে শাহবাগের অবস্থান কর্মসূচিতে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে বাধা দেওয়া এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচার হওয়া জামায়াতের নেতা গোলাম আজম ও মতিউর রহমান নিজামীর নামে স্লোগান দেওয়ার ঘটনাগুলোও উল্লেখ করেন বিশ্লেষকরা। ওই ঘটনাগুলো এনসিপিকে বিতর্কের মুখে ফেলেছে। যদিও দলটি বিবৃতি দিয়ে এর দায় অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, যারা এ ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে দায় তাদের। লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদের ভাষ্য, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে যেখানে কিছুদিন আগে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমন এলাকায় পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে আন্দোলনকারীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। সরকারের প্রশ্রয় সেখানে স্পষ্ট হয়েছে। এদিকে, এনসিপিসহ বিভিন্ন দলের আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবির ক্ষেত্রে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অনেকে বলে আসছিলেন, তারা দল নিষিদ্ধের পক্ষে নন। তবে মানবতাবিরোধী অপরাধের যে বিচার হচ্ছে, সেই বিচারে বা আদালতের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে ছিল বিএনপি। এছাড়া জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে, দলটির নেতারা এমন বক্তব্যও দিয়ে আসছিলেন। শেষ পর্যন্ত এনসিপি ও জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের আন্দোলনের মুখে যে প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করেছে, সেই প্রক্রিয়া নিয়েও বিএনপি নেতাদের অনেকে আপত্তি ছিল। তারা মনে করেন, ওই প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলার বা বিতর্ক সৃষ্টির সুযোগ আছে। তবে সেই আন্দোলনে অংশ না নিলেও বিএনপি পরে সরকারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে বিবৃতি দিয়েছে। সংস্কার ও নির্বাচনের সময়সহ বিভিন্ন ইস্যুতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অংশীজনদের মধ্যে বিভক্তি দৃশ্যমান হচ্ছিল কিছুদিন ধরে। এখন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে সেই বিভক্তির জায়গায় পক্ষগুলো আবার এক হয়েছে বলে দাবি করছে এনসিপি। দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের ভাষ্য, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সব অংশীজন বা সব দলের ঐক্য একটা পরিণতি পেলো আওয়ামী লীগ ইস্যুতে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে একটা বার্তাও গেলো। এটিই লাভের বিষয় বলে মনে করেন তিনি। আলোচনায় আছে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক। আওয়ামী লীগের ভোট বিএনপি-কে বাদ দিয়ে অন্য কোনো দলের পক্ষে যায় কি না, এটি বিএনপির জন্য চিন্তার বিষয় হতে পারে। আবার বিএনপির বাক্সেই ওই ভোট যায় কি না, জামায়াত ও এনসিপির এই বিপরীত চিন্তা রয়েছে। এছাড়া এই দলগুলো আওয়ামী লীগের ভোট নিজেদের পক্ষে টানার চেষ্টা করবে, তাদের দিক থেকেই এমন ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে বলে বিশ্লেষকেরা বলছেন। এসব দলের পক্ষ থেকে কখনো বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড়াতে আলাদা নির্বাচনি জোট করার চেষ্টা আলোচনায় আসছে। আবার এনসিপিসহ এসব দল বিএনপির সঙ্গেই নির্বাচনে আসন সমঝোতার প্রশ্নে আলোচনা চালাচ্ছে বলেও জানা যাচ্ছে। তবে রাজনীতি কোন দিকে মোড় নিচ্ছে- এই প্রশ্নের জবাব দৃশ্যমান হতে আরও অপেক্ষা করতে হবে।লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক
১ মাস আগে