ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৫ ০২:৫৫ পিএম
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে যত ভোগান্তি
চার লেন প্রকল্পের কাজে ধীরগতির কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত দুই মহাসড়কে গত কয়েক বছর ধরে চরম ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ। ঢাকা-সিলেট এবং কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের এই অংশে নানা জায়গায় খানাখন্দ আর ধুলোবালির সমস্যা নিয়ে চলাচল করে পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহন নিয়মিত ঘটছে দুর্ঘটনা। বৃষ্টির জন্য খানাখন্দরে জমেছে পানি এতে দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। কাজ কবে শেষ হবে তা অনিশ্চিত।
এরই মধ্যে জানা গেছে, চার লেন প্রকল্পের ৩টি প্যাকেজের মধ্যে ১টি প্যাকেজ বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর থেকে আখাউড়ার তন্তর পর্যন্তই চার লেন সড়ক নির্মাণ কাজ সীমাবদ্ধ থাকবে। বাদ দেওয়া হয়েছে তন্তর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত চার লেন কাজ।
জানা গেছে,গত মার্চে ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সভায় প্রকল্পের ৩টি প্যাকেজের মধ্যে ৩ নম্বর প্যাকেজ বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যেটির দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৩০০ কিলোমিটার। এই প্যাকেজে তন্তর থেকে আখাউড়া স্থল বন্দর পর্যন্ত চার লেন সড়ক করার কাজ অর্ন্তভুক্ত ছিল। এই প্যাকেজটি বাদের সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত বহাল থাকায় নতুন করে খরচ কমিয়ে সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব পেশ করা হয়। বর্তমানে চলমান প্যাকেজ ১ ও ২ এর আওতায় মোট ৩৯ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রকল্প এলাকায় মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে বৃষ্টির পানি জমে আছে। জেলা শহরের বিরাসার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন গ্যাস ফিল্ডের সামনে বিশাল খানাখন্দ; দেখতে বিশাল জলাশয়ের মত! এখানে বৃষ্টিতে প্রতিনিয়ত বাস, মালামাল বোঝাই ট্রাক এই জলাশয় থেকে উঠতে না পেরে আটকে থাকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢাকা-সিলেট এবং কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্টে এমন অবস্থা গত কয়েকমাস ধরে। চার লেন সড়ক উন্নীতকরণ কাজের জন্য দুর্ভোগের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে, আশুগঞ্জ গোলচত্বর ও বিশ্বরোড গোলচত্বর। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার রাধিকা থেকে উজানিসার পর্যন্ত বেহাল দশা সড়কের; বৃষ্টি হলেই খানাখন্দে জমে পানি, মহা সড়কে লেগে থাকে দীর্ঘ যানজট।
বিশ্বরোড বাসস্ট্যান্ড এলাকার মানুষজন জানায়, গত কয়েকদিন আগে বৃষ্টির সময় এখানকার অবস্থা খুবই নাজুক ছিল। দেখা গেছে কিছুক্ষণ পরপর গাড়ি উল্টে পড়ছে। এতে রোড ব্লক হয়ে যাওয়ায় গাড়ি চলছে না। ড্রাইভার গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে আছে, নতুবা ঘুমিয়ে পড়ে। গত সপ্তাহে এই মহাসড়কে প্রায় ৩০ কিলোমিটারের এক দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। যদিও ইটের খোসা দিয়ে আপাতত সাময়িক সমাধান হয়েছে। ঈদের আগে এমন অবস্থা হলে আর রক্ষা থাকবে না।
এদিকে আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর থেকে আখাউড়া স্থল বন্দর পর্যন্ত পুরোপুরি চার লেন মহাসড়ক হচ্ছে না। প্রকল্পের ৩টি প্যাকেজের মধ্যে একটি প্যাকেজ বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছে না প্রকল্পের অন্য দুই প্যাকেজের কাজও। এজন্য আরও ২ বছর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের ৫ বছর মেয়াদকালে গড়পড়তায় কাজ হয়েছে অর্ধেকের চেয়ে কিছু বেশি।
প্রকল্পের আওতায় ৩টি প্যাকেজে মোট ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার জন্য ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের সাথে চুক্তি হয়। ভারতীয় ঋণ সহায়তা ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা এ বছরের ৩০ জুন। শুরু থেকে নানা কারণে পিছিয়ে যায় প্রকল্পের কাজ।
গত ৫ই আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের ১০ আগস্ট ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চলে যায় নিজ দেশ ভারতে; এই সড়ক নির্মাণ কাজ অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। কয়েক মাস পর তারা ফিরলেও কাজ চলছে কচ্ছপের গতিতে।
প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. শামীম আহমেদ ভোরের আকাশকে বলেন, ‘কাজের সার্বিক অগ্রগতি শতকরা ৫৭ ভাগ।প্রকল্পের অনুমোদিত মেয়াদ আগামী মাসেই অর্থাৎ জুনে শেষ। সেক্ষেত্রে আমাদের কাজ যেহেতু এখনো বাকি এবং বিভিন্ন কারণে প্রকল্পের কাজ দেরি হয়েছে। সে কারণে আমরা নতুন করে ২ বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছি। বর্তমানে যে দুটি প্যাকেজের কাজ হচ্ছে সেটি ঢাকা-সিলেট এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লা মহাসড়কের অংশ। ৩৯ কিলোমিটারের মধ্যে ৩১ কিলোমিটার সড়ক আমরা চালু করে দিয়েছি। বাকি সাড়ে ৭ কিলোমিটার সড়ক অত্যন্ত দুরাবস্থায় রয়েছে। যেগুলো রিপিয়ার করে আমরা যানবাহন চলাচলের উপযোগী রাখছি। এগুলোতে পারমানেন্ট কাজ করে দুই লেন চালু করার প্রক্রিয়া রয়েছে।’
ভোরের আকাশ/আজামা