মশিউর রহমান সেলিম, লাকসাম (কুমিল্লা)
প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৫ ১২:০৫ পিএম
দাবদাহে লাকসামে অতিষ্ঠ জনজীবন
দক্ষিণ কুমিল্লার বৃহত্তম উপজেলা লাকসামের সকল পেশার মানুষ গত কয়েকদিনের আগাম গ্রীষ্মের দাবদাহ ও ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। চৈত্র মাসজুড়ে প্রচণ্ড খরা ও ভ্যাপসা গরমে মানুষ শূন্য হয়ে পড়েছে এলাকার অলি-গলি, হাটবাজার ও রাস্তাঘাট। জলবায়ুর প্রভাবে গত কয়েক দিনে উপজেলার জনজীবন বিপর্যস্ত ও দূর্বিসহ হয়ে উঠেছে।
নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে হাজার হাজার শিশু-কিশোর ও বৃদ্ধসহ সকল শ্রেণির মানুষ। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় ধুলা-বালুতে বাতাসে বিষাক্ত শিসা ছড়াচ্ছে এবং পুড়ে যাচ্ছে গাছপালা ও আবাদী জমির ফসল। এদিকে অবৈধ ট্রাক্টর-ভেগু দিয়ে মাটি কাটার ফলে কাঁচা-পাকা সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ধুলো বালি উড়ে এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া রাইস মিল ও ইট ভাটার কালো ধোয়ায় এলাকার পরিবেশ বিপন্ন।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, গত এক সপ্তাহেই উপজেলার সহস্রাধিক রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ক্লিনিক ও প্রাইভেট হাসপাতালগুলো। ওষুধ দোকানগুলোতেও ছিল প্রচণ্ড ভিড়। এই এলাকার প্রচণ্ড দাবদাহ ও গরমে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে মানুষ। দিনে প্রচণ্ড গরমে এ অঞ্চলের ছিন্নমূল মানুষ, শিশু-কিশোর ও বৃদ্ধদের পোহাতে হচ্ছে বাড়তি দুর্ভোগ। গত ২৪ ঘণ্টায় এ অঞ্চলের দাবমাত্রা মৌসুমের সর্বোচ্ছ বৃদ্ধি পেয়েছে। এলাকায় কিছুটা স্বস্থি’ও চৈতালি বাতাস থাকলেও বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ সংকট দেখা দিয়েছে। খাল-বিল, পুকুর, নদী এখন পানি শূন্য। মানুষ বাজার থেকে বিশুদ্ধ পানির নামে বিভিন্ন ব্রান্ডের বোতল ও জার এবং ভেজাল ওষুধ কিনে প্রতারিত হচ্ছেন।
সূত্রগুলো আরও জানায়, স্থানীয় আবহাওয়া অফিস টানা ভ্যাপসা গরমের আগামবার্তা ঘোষনা দেয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা করলেও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্ষা মৌসুম অনেক দেরি হচ্ছে। ফলে আসন্ন ইরি-বোরো ধান, গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি ও মৎস্য চাষে বর্তমান পানি সংকটে বড় ধরনের দুর্ভোগে পড়েছে কৃষকরা। চৈত্রের এ গরমের তাপদাহে স্থানীয় খেটে খাওয়া, দিনমজুর ও ছিন্নমূল মানুষের জীবনযাত্রার উপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। ২-৪ দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাত না হলে রোগব্যাধি আরো বাড়বে বলে ধারণা এলাকাবাসীর।
স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক জানায়, গত কয়েকদিনের টানা গরমে ভাইরাসজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। চৈত্রের দাবদাহ ও দিনে ভ্যাপসা গরম ও রাতে শীত এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ডায়রিয়া, আমাশয়, চর্ম ও এ্যাজমাসহ বিভিন্ন ভাইরাস রোগীর সংখ্যাই বেশি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, প্রচুর ঠান্ডা পানি, ঠাণ্ঠাজনিত খাবার, স্যালাইন, শরবত, আখের রস, জুস, আইস ও মৌসুমী ফল-ফলাদি খাওয়ার পরামর্শ দেন তারা। এ তাপদাহ কেবলমাত্র জনজীবনে অস্থিরতা আনছে না বরং মানবদেহের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
বাবু নামে এক কলেজ ছাত্র জানান, ‘শীতের আমেজে বেশ ভালোই ছিলাম, রমজান মাসও কেটেছে শান্তিপূর্ণভাবে। হঠাৎ করেই গরম পড়ে গেছে লাকসামে। এখন কলেজ খুলতে যাচ্ছে। আমাদেরকে চরম গরমের মধ্যে আসা-যাওয়া করতে হবে। একটু বৃষ্টি হলে স্বস্তি পেতাম।’ রমজান মাসের প্রায় পুরো সময় তেমন গরম না থাকলেও শেষের দিকে বেশ দ্রুত সময়ের মধ্যেই শুরু হয় এর তীব্রতা। গরমে অসুস্থতা ও রোগবালাই বৃদ্ধি নিয়ে মতামত জানতে চাওয়ার চেষ্টা করা হলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।
ভোরের আকাশ/এসএইচ