ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২৫ ০৪:১৪ পিএম
লেমুর চুরির ঘটনায় উদ্বিগ্ন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানার
সম্প্রতি গাজীপুরের সাফারি পার্ক থেকে লেমুরের মতো দুর্লভ প্রাণী চুরির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বুধবার (৯ এপ্রিল) দুপুরের দিকে গাজীপুরের শ্রীপুরে অবস্থিত গাজীপুর সাফারি পার্ক পরিদর্শনে শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
এরপর আগে, সকাল এগারোটার দিকে সার্বিক অবস্থা দেখার জন্য পার্কে আসেন তিনি। ভেতরে প্রবেশের পর একে একে পার্কের সকল দিক ঘুরে দেখেন। প্রাণীর অবস্থান, সংখ্যা, থাকার পরিবেশ, খাবার ও নিরাপত্তা বেষ্টনীর খোঁজ খবর নেন। এসময় তিনি পার্কের অব্যবস্থাপনা ও সাফারি পার্ক থেকে লেমুরের মতো দুর্লভ প্রাণী চুরির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “এভাবে দুর্লভ প্রাণী কীভাবে চুরি হলো, তা খুঁজে বের করতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্তদের, বিশেষ করে নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা দরকার। একই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে, অথচ এসব জায়গা এখনো সিসিটিভির আওতায় আনা হয়নি—এটা প্রশ্নবিদ্ধ।”
তিনি আরও বলেন, “যখন আপনি ঘটনার ১৪ দিন পর মামলা করেন, তখন চুরি যাওয়া প্রাণী ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। এখানে ময়না টিয়া চুরি হচ্ছে না,চুরি হচ্ছে বিলুপ্ত প্রায় বিদেশী প্রানী। আজ পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে, একটি সংঘবদ্ধ চক্র বাংলাদেশকে বন্যপ্রাণী পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহার করছে।”
উপদেষ্টা বলেন, “সাফারি পার্ক কোনো সাধারণ চিড়িয়াখানা নয়। এখানে প্রাণীগুলোকে প্রাকৃতিক পরিবেশের কাছাকাছি রেখে দর্শনার্থীদের তা উপভোগ করার সুযোগ দেওয়া হয়। তবে হাতিশালা, জাগুয়ার ও লেমুর বেষ্টনীতে সেই উপযুক্ত পরিবেশ নেই বলে জানান তিনি।
হাতিশালা পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, হাতির পায়ে শিকল পরিয়ে রাখলে সাফারি পার্কে কেনো? চিরিয়াখানা অথবা সার্কাসে থাকলেই হয়।তাছাড়া একটি হাতির চোখে লোমেন ঢাকা থাকায় তিনি কর্মকর্তাদের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “একই স্থান থেকে টিয়া, ময়না পাখি হারায় না যখন লেমুর হারিয়ে যাচ্ছে—এর মানে স্পষ্ট, এখানে একটি বড় ধরনের সমস্যা রয়েছে। সেটি চিহ্নিত করতে হবে।”
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “পার্কের ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত করতে হবে। এটি প্রাণীবান্ধব ও দর্শনার্থীবান্ধব করতে হবে। এখানকার কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার ঘাটতির পাশাপাশি জনবল সংকটও রয়েছে।” খাটো লেজের বানর দেশে একটিই আছে। এখানে একা একা থাকতে তার ভালো লাগে না, দর্শনার্থীদের আনন্দ দেয় না।বিদেশে যেখানে এ জাতের বিলুপ্ত প্রানী আছে সেখান থেকে আর একটি আনতে হবে। এ সময় তিনি বন্যপ্রানী হাসপাতালে নারায়নগঞ্জ হতে উদ্ধার হওয়া চিতা বাঘ পরিদর্শন করেন। তিনি চিতাশাবকের গায়ে হাত বুলিয়ে দেন।পরে চিকিৎসকের কাছে খুঁজ খবর নেন।
জানা যায়, গত ২৩ মার্চ রাতে সাফারি পার্কের বেষ্টনীর নেট কেটে লেমুর চুরির ঘটনা ঘটে। পরে ২৪ মার্চ পার্ক কতৃপক্ষ শ্রীপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এ বিষয়ে ঘটনার ১৫ দিন পর ৭ এপ্রিল শ্রীপুর থানায় মামলা হয়েছে। চুরির ১৫ দিন পার হলেও উদ্ধার হয়নি লেমুর পরিবারের তিন সদস্যের। একের পর এক প্রাণী চুরির ঘটনায় সাফারি পার্কের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। গত বছরের নভেম্বরে দুটি ম্যাকাও পাখি চুরি হয় এবং চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি একটি নীলগাই পার্কের সীমানা প্রাচীর টপকে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়, যা এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এবার চুরি হলো তিনটি আফ্রিকান লেমুর।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, গত ৫ আগষ্টের পর সাফারি পার্কের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেকটাই ভেঙে পড়ে ছিলো। আস্তে আস্তে আমরা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে চেষ্টা করছি। পার্কে জনবল সংকট রয়েছে বিষটি উর্ধতন কতৃপক্ষ অবগত আছে। গত ২৩ মার্চ রাতে পার্কে থাকা তিনটি লেমুর (দুটি শাবক ও একটি প্রাপ্তবয়স্ক) চুরি হয়ে যায়। লেমুর তিনটি উদ্ধারের জন্য পার্কের ওয়ার্লেট সুপারভাইজার আনিছুর রহমান বাদী হয়ে ২৪ মার্চ শ্রীপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
তিনি জানান, ২০১৮ সালের ৬ আগস্ট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাচারকালে লাভবার্ড, কাকাতুয়া, ম্যাকাও, ময়ুর, দুটি লেমুরসহ ২০২ জোড়া বিপন্ন পাখি ও বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ ও ঢাকা কাস্টমস হাউস। উদ্ধার হওয়া প্রাণীগুলো পরবর্তীতে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের মাধ্যমে সাফারি পার্কে হস্তান্তর করা হয়। ওই লেমুর জোড়া পার্কে প্রথমবারের মতো দুটি বাচ্চা দেয়। ২০২২ সালে একটি লেমুর মারা গেলে বাকি তিনটি লেমুর পার্কে ছিল। সর্বশেষ এই তিনটি লেমুর চুরি হওয়ার পর পার্কের লেমুর বেষ্টনী এখন শূন্য। বর্তমানে পার্ক থেকে লেমুর চুরির পর দেশের কোথাও আর কোনো লেমুর অবশিষ্ট নেই। গত ২৩ মার্চ চুরির ঘটনা ঘটলেও মামলা হয় পনের দিন পর। তাৎক্ষণিক মামলা নিয়ে ব্যাবস্থা গ্রহন করলে লমুর গুলো উদ্ধার করা সম্ভম হতো।
পরিদর্শনের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন, পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো. যাবের সাদেক, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক সানাউল্লাহ পাটোয়ারী, সেন্ট্রাল সার্কেলের বন সংরক্ষক এ এস এম জহির উদ্দিন আকন এবং সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা।
ভোরের আকাশ/এসএইচ