সমুদ্রে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা
পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৫ ১১:২০ এএম
মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার কারণে বরগুনা পাথরঘাটায় ঘাটে ভিড়ে আছে জেলেদের ট্রালার
বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য প্রতি বছর ১৫ এপ্রিল হতে ১১ জুন পর্যন্ত মোট ৫৮ দিন সকল প্রকার মৎস্য নৌযান কর্তৃক যে কোনো প্রজাতির মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে থাকে সরকার। এবারও এ নিষেধাজ্ঞা চলমান।
সমুদ্রে এই নিষেধাজ্ঞার কারণে কর্মহীন থাকেন পাথরঘাটাসহ দেশের মাছ ধরা পেশায় নিয়োজিত জেলেরা। এ সময় তাদের জন্য মাথাপিছু ৭৮ কেজি করে চাল বরাদ্দ করে সরকার। তবে নিষেধাজ্ঞা শুরুর এক মাসেরও বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও পাথরঘাটা উপজেলার নিবন্ধিত সমুদ্রগামী ১০হাজার ৫০ জন জেলে এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহায়তা পায়নি বলে অভিযোগ। এমন পরিস্থিতিতে পরিবার-পরিজনকে নিয়ে নানান সংকটে দিন পার করছেন জেলো।
মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘সামুদ্রিক মৎস্য বিধিমালা, ২০২৩ এর বিধি ৩ এর উপবিধি (১) এর দফা (ক) তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সমুদ্রে মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন ও মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণের জন্য ১৫ই এপ্রিল থেকে ১১ই জুন পর্যন্ত অর্থাৎ ৫৮ দিন গভীর সমুদ্রে সকল ধরনের মৎস্য নৌযান কর্তৃক যেকোনো প্রজাতির মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। গত বছর এই নিষেধাজ্ঞা ছিল ২০ই ‘মে’ থেকে ২৩শে জুলাই পর্যন্ত অর্থাৎ ৬৫ দিন।
কিন্তু দেশের জেলেদের করে আসা দাবির প্রেক্ষিতে এ বছর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ভারতের সাথে মিল রেখে আগের নিষেধাজ্ঞার সময় সীমা থেকে ৭ দিন কমিয়ে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞার এই সময় জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চালের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে এরই মধ্যে চিঠি এসেছে। সেই চিঠি অনুযায়ী এবছর জেলেদের জন্য ৪২ দিনের জন্য ৫৬ কেজি চালের বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। কিন্তু সেই চাল এখনো উপজেলায় পর্যায় এসে পৌঁছেনি। তবে বরাদ্দ চিঠি যেহেতু এসেছে অতএব দ্রুত সময়ের মধ্যে বরাদ্দকৃত চাল জেলেদের মাঝে বন্টন করা হবে বলে পাথরঘাটা উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানা গেছে। তবে বাকি ১৬ দিনের চালের বরাদ্দের চিঠি এখনো আসেনি বলে জানা গেছে।
অধিকাংশ জেলের অভিযোগ, সমুদ্রে সরকারের দেয়া নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে জেলেদের জন্য নামমাত্র সহায়তাস্বরূপ চাল বরাদ্দ থাকলেও তা অধিকাংশ জেলেরা পান না। অনেকেই প্রকৃত জেলে নন কিন্তু রাজনৈতিক বিবেচনায় এই সহায়তার চাল পেয়ে থাকেন। আবার অন্যদিকে যারা প্রকৃত জেলে তারা অধিকাংশ সময় বিভিন্ন কারণে এই চাল পাওয়া থেকে বঞ্চিত থাকেন। এবারের ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞার ৩২ দিন পার হয়ে গেলেও তারাই সহায়তার চাল পাননি।
শুক্রবার পাথরঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের জ্বীনতলা এলাকায় গিয়ে কয়েকজন জেলার সাথে কথা বললে রফিক নামে এক জেলে জানান, ‘নিষেধাজ্ঞার অর্ধেকেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত আমরা সরকারি কোন সহায়তা পাইনি। আমাদের যদি এ চাল না দেয়া হয় তবে নিষেধাজ্ঞার পর এ চাল আমাদের কোনই কাজে আসবে না। আমরা প্রতিটা দিন পরিবার পরিজনকে নিয়ে অসহায়ের মতন দিন যাপন করছি।’
শহীদুল নামে আরেক জেলে জানান, ‘আমরা জীবনের মায়া ত্যাগ করে পরিবার পরিজন ফেলে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারের জন্য যাই। গভীর সমুদ্র থেকে মাছ শিকার করে এনে সেই মাছ ঘাটে বিক্রি করি। সেই মাছ বিক্রি টাকা দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে দু’বেলা দুমুঠো খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকি কিন্তু এখন সমুদ্রের নিষেধাজ্ঞা চলায় কর্মহীন হয় ঘাটে বসে অলস সময় পার করছি। সরকারিভাবে প্রকৃত জেলেদের জন্য সরকারি সহায়তা দেয়ার কথা থাকলেও আমাকে সরকারি কোন সহায়তা দেয়া হয় না। এ নিয়ে আমি একাধিক বার অভিযোগও করেছি কিন্তু আমার নামে সরকারি সহায়তায় আজ পর্যন্ত আসেনি।’
বরগুনা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, দেশের অর্থনীতিতে জেলেদের ভূমিকা অপরিসীম। তারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে পরিবার-পরিজন রেখে গভীর সমুদ্র থেকে মাছ শিকার করে আনে। তাদের স্বীকারকৃত মাছ দেশ-বিদেশে রপ্তানি করে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। যেহেতু দেশের অর্থনীতিতে জেলেদের বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে তাই সরকারের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে দেশের জেলেদের জন্য সরকারি সহায়তাস্বরূপ চালের পাশাপাশি নগদ অর্থ দেওয়া হোক। আর নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল যথা সময়েই বন্টন করা হোক।
এ বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হাসিবুল ইসলাম জানান, সরকারিভাবে জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চালের চিঠি পেয়েছি। তবে এর বন্টনের বিষয় এখনো কোন সিদ্ধান্ত পাইনি তবে সিদ্ধান্ত পাওয়ার সাথে সাথে কার্ড দারি তালিকাভুক্ত জেলেদের মাঝে এই বরাদকৃত চাল বন্টন করে দেয়া হবে।
ভোরের আকাশ/আজাসা