কামরুল হাসান রুবেল, সাভার (ঢাকা)
প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০২৫ ০২:১০ পিএম
‘ময়লার দায়িত্বে যারা আছে তারাই আগুন ধরাইয়া দেয়’
‘ময়লার দায়িত্বে যারা আছেন, তারাই আগুন ধরিয়ে দেন। একেক দিন একেক দিকে আগুন লাগান। এটা নিত্যদিনের চিত্র।’ এভাবেই সাভারের আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে (ভাগাড়) নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক আনসার সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বর্ণনা দিচ্ছিলেন। আমিনবাজারে গিয়ে দেখা গেল, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ময়লার ভাগাড়ের অন্তত ২০টি জায়গায় আগুন জ্বলছে। বিষাক্ত ধোঁয়া উড়ে যাচ্ছে আকাশে।
আমিনবাজারের ভাগাড়ের মতো সাভার ও আশুলিয়ার মহাসড়কগুলো ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের রাজখাল, ওলাইল, জোরপোল ব্রিজ, রেডিও কলোনি, গেন্ডা, প্রান্তিক, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পলাশবাড়ী, বাইপাইল বাসস্ট্যান্ডের পাশে শ্রীপুর, চক্রবর্তী, বারইপাড়া এবং টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের আশুলিয়া ব্রিজ, জিরাবোসহ বিভিন্ন স্থানে ময়লার স্তুপ। যা দেখে মনে হবে ছোটখাটো পাহাড়। দিন যত বাড়ছে, তত বাড়ছে যেখানে-সেখানে ময়লার স্তুপ। বিভিন্ন স্থানে ময়লা পোড়াতেও দেখা গেছে।
আমিনবাজারের ভাগাড়ের বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি প্রকল্প নিয়ে বহু বছর ধরে আলোচনা হচ্ছে। তবে ২০২৩ সালের অক্টোবরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৭২ কোটি টাকা।
২০২৩ সালের নভেম্বরে উত্তর সিটির তৎকালীন মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছিলেন, ২০২৬ সালের মধ্যে এ প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা-২০২২-এর ধারা ১২ অনুযায়ী বর্জ্য বা তার কোনো অংশ যত্রতত্র খোলা অবস্থায় সংরক্ষণ বা পোড়ানো নিষেধ। বিধিমালায় বলা আছে, রাস্তা, সড়ক, মহাসড়কের পাশে কোনো অবস্থায় বর্জ্য পোড়ানো যাবে না। এটি ভঙ্গ করলে দুই বছরের কারাদণ্ড বা দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।
বায়ুমান গবেষকেরা বলছেন, সড়কে পড়ে থাকা ময়লার বড় অংশ থাকে প্লাস্টিক, যা পোড়ানোর কারণে ডাই-অক্সিন, ফুরান, মার্কারি, পলিক্লোরিনেটেড বাই ফিনাইলের মতো বিষাক্ত উপাদান বাতাসে যুক্ত হয়। বর্জ্য পোড়ানোর কারণে কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইডসহ অন্তত ছয়টি বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়।
সাভার থেকে আমিনবাজারের দিকে আসার পথে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে দেখা গেল, কয়েকটি জায়গায় ময়লার স্তূপে আগুন জ্বলছে। যেমন সালেহপুর ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় আরিচামুখী লেনের পাশে ও বলিয়ারপুর সেতুর পাশে তিনটি স্থানে ফেলে রাখা হয়েছে নানা ধরনের বর্জ্য, যাতে আগুন জ্বলছিল।
বলিয়ারপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক নান্নু মিয়া বলেন, ‘সারাদিনই ভ্যানে করে এলাকার (মহাসড়কসংলগ্ন আশপাশের এলাকা) ময়লা-আবর্জনা সড়কের পাশে রাখে। তারাই আগুন ধরিয়ে দেয়।’
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিলসহ কোনো জায়গায়ই কোনোভাবেই ময়লা পোড়ানো যাবে না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যদি কার্যকরভাবে করা না যায়, তাহলে ঢাকাবাসীকে বায়ুদূষণের হাত থেকে রক্ষা করা কঠিন হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থাগুলোর আরও বেশি দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। আমরা খুব শিগগির বর্জ্য পোড়ানোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করব।’
ভোরের আকাশ/এসএইচ