শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ১২:২২ পিএম
শেরপুরে যানজটে দুর্ভোগ
শেরপুর জেলা শহরে প্রায়শই যানজট লেগেই থাকে। যানজটের কারণে জনদুর্ভোগ, চরম দুর্ভোগে স্থানীয় জনগণ। প্রয়োজনের তুলনায় অধিক সংখ্যক ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক ও অটোরিকশার কারণে এ যানজট সৃষ্টির প্রধান কারণ। এছাড়াও শহরের সড়কগুলোর পাশে অবৈধ দোকান, শহরে গড়ে ওঠা মার্কেট ও ভবনে যানবাহন পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকা, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করাসহ নানা কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। পৌর এলাকায় বিভিন্ন সড়ক সরু হওয়া, সড়কের মোড়ে মোড়ে রিকশা গ্যারেজ, স্ট্যান্ড গড়ে তোলা ও সড়কে দাঁড়িয়ে পৌর টোল ও সমিতির চাঁদা আদায়, পরিকল্পিত ট্রাফিক ব্যবস্থা গড়ে না ওঠাও যানজটের অন্যতম কারণ বলে মনে করেন পৌরবাসী।
জানা যায়, শেরপুর পৌরসভার পক্ষ থেকে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি ব্যাটারি চালিত ও তিন চাকার রিকশার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন ইউনিয়ন ও উপজেলা থেকে আসছে হাজার হাজার রিকশা। বিশিষ্টজন ও নাগরিকদের দাবি, জেলা শহরে প্রতিনিয়ত ১০-১২ হাজার অটোরিকশা ও তিন চাকার রিকশা চলাচল করে। ফলে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জেলা শহরের জেলা হাসপাতাল রোড, শাপলা চত্বর, খোয়ারপাড় মোড়, তিনআনি বাজার, নয়ানী বাজার, জেলা প্রশাসক অফিস মোড়, বটতলা, নিউ মার্কেট, থানা মোড়, তাতালপুর, শেখহাটি, সদর উপজেলার কুসুমহাটি, কানাসাখোলা, বাজিতখিলাসহ বিভিন্ন সড়কে যানজটে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে মানুষ। যানজট নিরসনের জন্য নাগরিক, বিশিষ্টজনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ দাবি জানিয়ে আসছে।
যানজট নিরসনের জন্য জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা সময় উদ্যোগ নিলেও রাজনৈতিক নেতা, সিএনজি, অটোরিকশা ও ইজিবাইকের চালকদের অসহযোগিতার কারণে তা বেশিদিন টিকে থাকেনি।ইতিপূর্বে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশাকে সাদা ও লাল রঙ দিয়ে পর্যায়ক্রমে চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তখন যানজট হ্রাস পেয়েছিল। কিন্তু অটোরিকশা চালকেরা রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে এ নিয়মকেও ভেঙে দেয়। ফলে যানজট আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
সড়ক সম্প্রসারণ, রাস্তার দু’পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, ইজিবাইক ও ব্যাটারি চালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণ, সড়কে একমুখী চলাচল, রাস্তা থেকে বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণ করে আন্ডারগ্রাউন্ড বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনের দাবি জানান। সেইসাথে প্রশাসন, পুলিশ ও পৌর কর্তৃপক্ষের মধ্যে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সমন্বয় জোরদার করারও দাবি জানান। যানজট নিয়ন্ত্রণে শহরের চতুর্দিকে চক্রাকারে বাইপাস সড়ক নির্মাণসহ শহরের উন্নয়নে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নাগরিক সভা করে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী মাস্টারপ্ল্যান করার জন্যও দাবি তোলা হয়েছে। সম্প্রতি শেরপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যানজট নিরসনে ‘সিএনজি ও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শেরপুর পৌর প্রশাসক মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান জানান, জেলা প্রশাসন অফিসের পক্ষ থেকে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। সভায় শহরের যানজট নিরসনে আগামী ১ জুলাই থেকে পৌরসভার লাইসেন্সবিহীন সকল সিএনজি ও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মিজানুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, মতবিনিময় সভায় যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন করা হবে। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, যানজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। জনদুর্ভোগ লাঘবে আমরা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এজন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
ভোরের আকাশ/এসএইচ