চিতলমারী (বাগেরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৫ ০৪:০৯ পিএম
দলিত সুনীলের সংসার চলে আমগাছের ‘মতুয়া ডঙ্কা’ বানিয়ে
সমাজের দলিত সম্প্রদায়ের সুনীল বিশ্বাসের সংসার চলে আমগাছের ‘মতুয়া ডঙ্কা’ বানিয়ে। আমগাছের ডঙ্কার ধ্বনি মধুর হয়- তাই দেশ-বিদেশে এর বেশ চাহিদা রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। আগামী ১৩ জ্যৈষ্ঠ মাদারীপুরের কদমবাড়িতে গণেশ পাগলের কুম্ভ মেলাকে সামনে রেখে বাগেরহাটে নানা আয়োজন চলছে। বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার সুনীলের মতো অন্যান্য দলিতদের বাড়িতে বাঁশ-বেতের কারুকাজ সমৃদ্ধ নানা জিনিস তৈরির ব্যস্ততা বেড়েছে। তারা আশায় আছেন, অন্যান্য বছরের ন্যায় এই গণেশ পাগলের মেলায় গিয়ে তাদের হস্তশিল্পের মালামাল বিক্রি করে দৈন্যতা ঘুচাবেন।
সরেজমিনে জানা গেছে, চিতলমারী সদর, সন্তোষপুর, কুরমনি, বাবুগঞ্জ বাজার,নালুয়া বাজার, কালিগঞ্জ বাজারসহ এই উপজেলা প্রায় আড়াই হাজার দলিত সম্প্রদায়ের লোক রয়েছে। তারা বাঁশ-বেতের কারুকাজ, ডঙ্কা-ঢাক-ঢোল তৈরি, জুতা তৈরি ও মেরামত, চুল কাটা, বাদ্য-বাজনাসহ নানা কাজ করেন। কিন্তু বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির তালের সঙ্গে তাদের আয়ের সামঞ্জস্য হয় না।
তাই তাদের বিভিন্ন এনজিও ও কারেন্ট সুদ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আনতে হয়। এরপর এই দেনা মেটাতে এবং নিজেদের দৈনন্দিন মৌলিক চাহিদা মেটাতে তারা হিমশিম খায়। তাই তারা অপেক্ষা করেন বছরান্তে গণেশ পাগলের কুম্ভ মেলার জন্য। এই মেলাতে লাখ লাখ মানুষের সমাগমে তাদের হস্তশিল্প ভালো বিক্রি হয়।
বাদ্যযন্ত্র ‘মতুয়া ডঙ্কা’ তৈরির কারিগর চিতলমারীর সন্তোষপুর গ্রামের শ্রীমনোরঞ্জন বিশ্বাসের ছেলে সুনীল বিশ্বাস (৫০) জানান, অগ্রহায়ণ থেকে জ্যৈষ্ঠ পর্যন্ত- এই ছয় মাস মতুয়া ডঙ্কার ব্যাপক চাহিদা থাকে। আমগাছ, বাঁশ, বেত, চামড়া, রশিসহ নানা উপকরণ তিনি বিশেষ পদ্ধতি ডঙ্কা তৈরি করেন। মানসম্মতভাবে এই বাদ্যযন্ত্র তৈরিতে খরচা বেশি। তাই দেশ-বিদেশের মতুয়াদের কাছে চাহিদাও ব্যাপক।
চলতি বছর এনজিও হতে দেড় লাখ টাকা লোন এনে কাজটা করেন। মেলাতে তাদের তৈরি প্রতিটি ডঙ্কা পনেরোশ থেকে পাঁচ হাজার টাকা দামে বিক্রি হয়। পুঁজি বেশি থাকলে আয় ভালো হয়। গণেশ পাগলের মেলাসহ গোপালগঞ্জে শ্রীধাম ওড়াকান্দির মেলা এবং এলাকার অন্যান্য মেলাতে তার ডঙ্কা বিক্রি হয়। ডঙ্কা তৈরির কাজে ছয়জন লোক নিয়মিত দৈনিক জনপ্রতি এক হাজার টাকা মজুরি পান। এই কাজে সরকার ও বিত্তবান ব্যবসায়ীর সহায়তা পেলে উপকার হত। তাদের তৈরি নানা উপকরণ থেকে বৈদেশিক আয়ের ব্যবস্থা হতে পারে।
সরেজমিনকালে ‘ডঙ্কা’র কারিগর সুনীল বিশ্বাসের বাড়িতে দেখা হয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক ও ক্রিয়েটিভ ফাইন আর্ট ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ তীর্থঙ্কর বালার সঙ্গে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুনীলের মতো দেশীয় চারুকারু শিল্পে যারা জড়িত তারা মূলত বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরেন। এই শিল্পকে বাণিজ্যিকভাবে প্রসারিত করতে সরকার এবং বিত্তশালী ব্যবসায়ীকে এগিয়ে আসতে হবে।’
চিতলমারী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সোহেল পারভেজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশ-বিদেশে বাঁশ-বেত শিল্প এবং বাদ্যযন্ত্র ডঙ্কা-ঢোলের চাহিদা রয়েছে। বিশেষত মতুয়াদের ‘ডঙ্কা’র ব্যাপক চাহিদা আছে। চিতলমারীর দলিতরা হস্তশিল্পের মাধ্যমে বাংলার ঐতিহ্যকে তুলে ধরেন। তাই ইতিমধ্যে ১৬১ জনকে প্রশিক্ষণসহ নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আরো সহযোগিতা করা হবে।’
ভোরের আকাশ/এসএইচ